
সমাজে বসবাসরত মানুষের মধ্যে পৃথক পৃথক সত্ত্বা বিদ্যমান। অভ্যন্তরীণ গুণাগুণ, দোষ-ক্রটি ছাড়া বাহ্যিকভাবেও রয়েছে অনেক পার্থক্য। অনেকেই আছেন যাদের কারো হাত নেই, কারো পা নেই, কারওবা দৃষ্টি শক্তি নেই। আবার অনেকে কানে শোনে না কথাও বলতে পারে না। তাই সমাজ এদেরকে প্রতিবন্ধী হিসেবে চিহ্নিত করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক জরিপ অনুসারে, আমাদের দেশের প্রায় ৮ থেকে ১০ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে প্রতিবন্ধিতার শিকার। মানুষ প্রতিবন্ধী হয় নানা কারণে। যেমন-পঙ্গুত্ব নিয়েই জন্মগ্রহণ, অপুষ্টির কারণে পঙ্গুত্ব বরণ, রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে প্রতিবন্ধী হয়ে ওঠা প্রভৃতি। গর্ভকালীন সময়ে অপুষ্টিজনিত কারণে শিশু পঙ্গু হয়ে জন্মগ্রহণ করে। পোলিও, টাইফয়েট, নিউমোনিয়া, রিকেট ইত্যাদি রোগে প্রতিবন্ধিতার অন্যতম কারণ। তাছাড়া স্নায়ুগত সমস্যা, হাড় বা অস্থির অসম অবস্থান, অঙ্গাহানি, দুর্ঘটনা ইত্যাদি কারণেও শিশু বা ব্যক্তি প্রতিবন্ধী হয়।
বিভিন্ন পরিসংখ্যান ও গবেষণার তথ্য বলছে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা শিক্ষা, পুষ্টি, স্বাস্থ্যসেবা, কর্মসংস্থান, সামাজিক সহযোগিতা ও সামাজিক সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার থেকে প্রায় সময়ই বঞ্চিত হয়ে থাকে। তাদের মধ্যে যারা নারী; তারা একই সঙ্গে ‘নারী’ ও ‘প্রতিবন্ধী’ হওয়ায় বিভিন্ন পরিসরে দ্বিগুণ বৈষম্য, দারিদ্র্য এবং শারীরিক নির্যাতনের ঝুঁকির মধ্যে থাকে।
সম্প্রতিকালে বিভিন্ন দেশ প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর নানাবিধ কল্যাণ ও উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণসহ আন্তর্জাতিক ফোরামে প্রতিবন্ধী বিষয়ক বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণের অঙ্গীকার প্রদান করছে। তবুও পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশেই প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী সাধারণত সমাজের অনগ্রসর ও পরনির্ভরশীল অংশ হিসেবেই রয়ে গেছে। দেশের বেশির ভাগ মানুষের মধ্যে প্রতিবন্ধিতা বিষয়ে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। যদিও এটা ঠিক যে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা যদি প্রয়োজনীয় সমর্থন পায় তবে তারা তাদের সক্ষমতা প্রমাণ করতে পারে এবং জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে।
তাই প্রতিবন্ধীদের প্রতি অবহেলা নয়, ভালোবাসা আর সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। আমাদের উচিত প্রতিবন্ধী মানুষের দিকে তাকানো তার অক্ষমতার দিকে নয়। তাদের দিকে রাষ্ট্র ও সমাজ উভয়কেই বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। মনে রাখতে হবে জনসংখ্যার বিশাল একটি অংশকে উন্নয়নের বাইরে রেখে কোনো দেশের পক্ষে এগিয়ে যাওয়া কখনোই সম্ভব নয়। তাই উন্নয়নের স্বার্থে সবাইকে নিয়ে একটি সম্মিলিত সমাজ বিনির্মাণ করা অত্যাবশ্যক। জাতীয় উন্নয়নের বৃহত্তর স্বার্থেই প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্ত করা এখন সময়ের দাবি।
মো. মেহেদী হাসান অর্ণব
শিক্ষার্থী, সরকারি তিতুমীর কলেজ, ঢাকা।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: