
বাবুগঞ্জ (বরিশাল) থেকে : ১২ বছর ধরে নিজ ঘরের চার দেয়ালে বন্ধী জীবন কাটাচ্ছেন বাবুগঞ্জের কেদারপুরের আল-আমিন (৩০) নামের এক যুবক। উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নের সারে পাঁচআনি গ্রামের মো. আবুল কালাম হাওলাদার এর পুত্র মেধাবী আল-আমিন ইউনিয়নের জম্বিলা খাতুন মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করেন।
পরবর্তীতে একই ইউনিয়নের পশ্চিম ভূতেরদিয়ো আলীম মাদ্রাসায় আলীম শ্রেণিতে ভর্তি হন। আলীম শেষ বর্ষের পড়া অবস্থায় মাদ্রাসায় বিভিন্ন সময় অস্বাভাবিক আচরণ করেন। এসময় পরিস্থিতিকে পরিবারের লোকজন আল-আমিনকে নিজ বসত ঘরের খুঁটির সাথে পায়ে শিকল বন্ধী করে রাখেন। পরবর্তীতে পাবনা মানসিক হাসপাতালে চিকিৎস্যা করানো হয়। চিকিৎস্যকরা সুস্থ্য আছেন জানিয়ে হাসপাতাল ত্যাগের পরামর্শ দেন আল-আমিনের পরিবারকে। কিন্তু বিধি বাম! মেধাবী ছাত্র আল-আমিনকে নিয়ে যখন পরিবারের লোকজন বাড়িতে আসেন তার পর থেকেই তার অস্বাভাবিক আচরণের মাত্রা বাড়তে থাকে। পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশিদের উপর হামলা করতেন আল- আমিন। এক সময় মেধাবী আল-আমিনের জীবন বন্ধী হয়ে যায় চার দেয়ালের মাঝে।
পরিবারের লোকজন ৫ থেকে ৭ ফুট দৈর্ঘ্য প্রস্থের একটি পাকা ঘরে লোহার দরজায় আবদ্ধ করে রাখেন আল-আমিনকে। সেই থেকে আজ একযুগ ধরে নির্জন ঘরে বন্ধী আল-আমিন। দেয়ালবন্ধী আল-আমিন সাংবাদিকদের বলেন, তাঁর এমন ভাবে বন্ধী থাকতে আর ভালো লাগে না! তিনি খাবার খেতে চান,তিনি মুক্ত আকাশে পাখির মত উড়তে, আল-আমিন বলেন,পরিবারের সদস্যরা আমাকে বন্ধী করে রেখেছন আমি মুক্ত হতে চাই।
আল-আমিনের পিতা মো. আবুল কালাম কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, পুত্রকে আমার স্ত্রী দীর্ঘদিন অসুস্থ্য থেকে গত ৬ বছর পূর্বে মৃতবরণ করেন। চার সন্তানের মধ্যে আল-আমিন ছাড়া বাকিরা ঢাকায় থাকেন। বড় ছেলে ও মেঝ ছেলে একটি গার্মেন্টস্ ফ্যাক্টরীর পণ্যবাহী ট্রাক চালক হিসেবে চাকুরী করেন।
এছাড়া ছোট থেকে ঢাকায় স্বল্প আয়ের ব্যবসা করেন। আবুল কালামম (৬০) জানান, স্ত্রীর মৃত্যুর পর তিনি তার সন্তান আল-আমিনকে নিয়ে মানবেতর ভাবে খেয়ে না খেয়ে জীবনযাপন করছেন। পুত্রের মানসিক সমস্যা থাকার কারণে এমন করে বন্ধী করে রেখেছেন। তবে বর্তমানে অন্য সন্তানদের আয় না থাকায় তেমন খোঁজ নিতে পারছেন না, ফলে অনাহারেই দিন কাটাতে হচ্ছে পিতা-পুত্রের! পিতা আবুল কালাম সরকারের পক্ষ থেকে তার পুত্রের চিকিৎস্যা ও খাবারের ব্যবস্থা করার জোর দাবি জানান।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নূরে আলম বেপারী জানান, আল- আমিন মানবেতর ভাবে দীর্ঘদিন বন্ধী অবস্থায় রয়েছে। তাকে বন্দিদশা থেকে উদ্ধার করতে প্রশাসনের লোকদের এগিয়ে আসা উচিত। আমি খোঁজ নিয়ে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখবো।
এ বিষয়ে সদ্য যোগদানকৃত বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুসরাত ফাতেমা বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের কথা জানান তিনি।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: