ঢাকা | বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২ [email protected] +৮৮ ০১৬৮২ ৫৬ ১০ ২৮, +৮৮ ০১৬১১ ০২ ৯৯ ৩৩

ফুলবাড়ীতে ভাঙ্গা ঘরে মানবেতর জীবন কাটছে বৃদ্ধ দম্পতির

মো: মনিরুল ইসলাম | প্রকাশিত: ২৯ এপ্রিল ২০২২ ০৬:০৪

মো: মনিরুল ইসলাম
প্রকাশিত: ২৯ এপ্রিল ২০২২ ০৬:০৪

ছবি: জাকারিয়া মিঞা

নিজস্ব প্রতিবেদক : ৭৩ বছরের বয়োঃবৃদ্ধ তিনি। রোদ হোক আর বৃষ্টি, জীবন সায়ান্নে এসেও প্রতিটি দিন দুশ্চিন্তায় কাটাতে হয় তাকে। মাথা গোঁজার নিরাপদ আশ্রয়স্থল নেই যে তার। যৌবনে যিনি সন্তানদের চাহিদা পূরণ করেছেন, করেছেন নিরাপদ আশ্রয়ের ব‍্যবস্থা। তারাও আজ তার পাশে নেই। স্ত্রীকে নিয়ে জোড়াতালি দেয়া ভাঙ্গাচোরা ঘরে বসবাস করেন তিনি। নেই খাবারের কিংবা অসুখের চিকিৎসা নিশ্চয়তা। তিনি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড বোয়াইলভীড় গ্রামের বাসিন্দা আফছার আলী।

সরেজমিনে দেখা গেছে, আফছার আলী তার স্ত্রী আছিয়া বেগমকে (৬০) সাথে নিয়ে তাদের বসতঘরের ভাঙ্গা বেড়া পলিথিন, ছেঁড়া কাপড় দিয়ে ঢেকে দিচ্ছেন। তাদের বসতঘরের বর্তমান অবস্থা দেখে এটিকে ঘর না বলে বলা চলে মৃত্যু ফাঁদ। মরিচা ধরে ঝরঝরে হয়ে গেছে গোটা ঘরের চালের টিন। টিনে তৈরি হয়েছে হাজারো ফুটো। আর তাতেই সামান্য বৃষ্টিতে ভিজে যায় ঘরের বিছানাপত্রসহ সবকিছু। দীর্ঘদিন মেরামতের অভাবে ঘরের কাঠামোর অবস্থা এতটাই জরাজীর্ণ যে যেকোন সময় ঘরটি ভেঙ্গে পড়তে পারে।

আফছার আলী বলেন, স্ত্রী, ৩ ছেলে ও ৩ মেয়েকে নিয়ে ৮ সদস্যের পরিবার ছিল। আমার বাড়িভিটার ১১ শতাংশ জমি ছাড়া আর কোন জমিজমা নাই। দিনমজুরি করে পরিবারের সকলের খরচ জোগাতাম। যা আয় রোজগার হতো তা থেকে কিছু জমিয়ে পাড়া প্রতিবেশি ও আত্মীয় স্বজনদের সহযোগিতায় ৩ মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। বড় ছেলে বিয়ে করে বউ বাচ্চা নিয়ে অন্যত্র চলে গেছে। মেজো ছেলেও বিয়ে করে আলাদা সংসার করছে। সেও দিনমজুরি করে। আর ছোট ছেলে কয়েকদিন আগে কাজের জন্য ঢাকায় পাড়ি জমিয়েছে। এখন আমরা এই দুই মানুষ এই ভাঙ্গা ঘরে বসবাস করছি। আগের মত কাজ করতে পারি না। বয়স্ক ভাতার কিছু টাকা পাই তা দিয়ে খেয়ে না খেয়ে কোন রকমে দিন কাটছে। টাকার অভাবে ঘরটা মেরামত করতে পারছি না। ঘরের চাল, বেড়া খুলে খুলে পড়ে যাচ্ছে। এই বর্ষায় আমরা বৃদ্ধ দুই মানুষ থাকবো কোথায় বলেই চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে যান আফছার আলী।

আফছার আলীর স্ত্রী আছিয়া বেগম বলেন, বৃদ্ধ বয়সে ভাঙ্গা ঘরে থাকতে আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছে। রাতে একটু বৃষ্টি হলেই বিছানাপত্র গুটিয়ে বসে রাত কাটাতে হয়। ঘর বৃষ্টির পানিতে ভিজে যায়। ভাঙ্গা বেড়ার ফাঁক দিয়ে প্রায়ই কুকুর বেড়াল ঘরে ঢোকে। একটু বাতাস হলেই ঘরের চাল দুলতে থাকে। আমরা সারাক্ষণ ঘরের নিচে চাপা পড়ার ভয়ে থাকি। আমরা শেষ বয়সে নিরাপদ একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই চাই।

স্থানীয় আব্দুল কাদের বলেন, আফছার আলী ও তার স্ত্রী বর্তমানে চরম ভোগান্তির শিকার। ছেলেরাও বাবা-মাকে সহযোগিতা করতে অপারগ। এখন এই বৃদ্ধ অসহায় আফছার আলীর বসতঘরটি মেরামতের জন্য জনপ্রতিনিধি ও বিত্তবানদের সহযোগিতার কোন বিকল্প নাই।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: