ঢাকা | শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫, ২৮ চৈত্র ১৪৩১ [email protected] +৮৮ ০১৬৮২ ৫৬ ১০ ২৮, +৮৮ ০১৬১১ ০২ ৯৯ ৩৩

মামলা প্রত্যাহারের আবেদন দণ্ডপ্রাপ্ত সেই ওসি মোয়াজ্জেমের

এ আর লিমন | প্রকাশিত: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৪:২৪

এ আর লিমন
প্রকাশিত: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৪:২৪

শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি ও সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ফেনীর সোনাগাজী ফাজিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার মামলায় দণ্ডিত সংশ্লিষ্ট থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেন রাজনৈতিক হয়রানিমূলক বিবেচনায় মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন।

রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।  

ঢাকার জেলা প্রশাসকের কাছে করা আবেদনটি বর্তমানে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে মতামতের জন্য রয়েছে। 

ভিডিও ভাইরালের ঘটনায় মামলাটি করেছিলেন বর্তমানে কারাগারে থাকা সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। ওই সময় তিনি যুবলীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। 

মামলা প্রত্যাহারের আবেদনে মোয়াজ্জেম হোসেন উল্লেখ করেন, সোনাগাজী মডেল থানার ওসি হিসেবে গত ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর হতে ২০১৯ সালের ১০ এপ্রিল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। ২০১৯ সালের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ কর্তৃক আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান ওরফে রাফি যৌন হয়রানির শিকার হলে তিনি অফিসারের মাধ্যমে তাকে (নুসরাত) থানায় এনে অনুমতি নিয়ে জবানবন্দি ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে রেকর্ড করেন। মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল সরকারি প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হওয়ায় তাকে গ্রেপ্তারের জন্য প্রমাণস্বরূপ তিনি ভিকটিমসহ আরও সাক্ষীর জবানবন্দি রেকর্ড করেন।

পরে ভিকটিমের মায়ের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা নিয়ে অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করেন। ওই বছরের এপ্রিলে পরীক্ষা চলাকালীন মাদ্রাসার ছাদে ভিকটিমের গায়ে একদল দুষ্কৃতকারী কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে হত্যাচেষ্টার সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষণিক তিনি (ওসি) ঘটনাস্থলে পৌঁছে ভিকটিমকে উদ্ধার করে নিজ খরচে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। পরে ভিকটিমের ভাইয়ের লিখিত অভিযোগের মাধ্যমে আটজনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার মামলা নিয়ে দুই দিনের মধ্যে চারজনসহ আট আসামিকে গ্রেপ্তার করেন। ওই সময় ঘটনাটি সারা দেশ তথা বিশ্ব মিডিয়ায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। এর প্রেক্ষিতে থানায় সব সময় মিডিয়াকর্মীসহ সবার ভিড় লেগে থাকতো। এর ফাঁকে তার অজ্ঞাতে মোবাইল থেকে আতিয়ার রহমান সজল নামে সময় টিভির স্থানীয় প্রতিনিধি ভিকটিমের দেওয়া জবানবন্দি মোবাইলে শেয়ারইটের মধ্যমে নিয়ে নেন। ১০ এপ্রিল ভিকটিম মারা যাওয়ার পর তার জবানবন্দির ওই ভিডিও ভাইরাল হয়, যা নিয়ে ১৪ এপ্রিল তিনি থানায় জিডি করেন। ১৬ এপ্রিল ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন এ ঘটনায় সাইবার ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা করেন। 

বিচারক মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের আদেশ দেন। পিবিআই বে-আইনিভাবে পিটিশনটির তদন্ত করে একটি মনগড়া রিপোর্ট দেয়। রিপোর্টে তদন্ত কর্মকর্তা কোন মোবাইল বা আইডি থেকে ভিডিওটি পোস্ট হয়েছে, তা উল্লেখ করেননি। কে করেছে, তিনি তার তদন্ত না করে রিপোর্ট শেষে 'ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে' মর্মে রিপোর্ট দিলে ট্রাইব্যুনাল নিয়ম মোতাবেক সমন না দিয়ে সরাসরি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। পরে হাইকোর্টে জামিনের জন্য গেলে পুলিশ তাকে (ওসি) গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করে। আদালত জামিন না দিয়ে ঘটনাস্থলের সাক্ষীদের পরীক্ষা না করে শুধুমাত্র বাদীর মনোনিত সাক্ষ্য নিয়ে সর্বোচ্চ সাজা প্রদান করেন। একপর্যায়ে প্রায় ৫ বছর জেল খেটে হাইকোর্টে আপিল করে জামিনে মুক্ত হন তিনি। বাদী থেকে শুরু করে পিবিআই কর্তৃক অভিযোগ দাখিল, আদালতে চার্জ গঠন এবং সাজা প্রদান কোথাও আইনের অনুসরণ করা হয়নি। 

তা ছাড়া ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৮ ধারার বিধান অনুযায়ী ব্যারিস্টার সুমন এই মামলার বাদী হতে পারেন না। তাকে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থাৎ ভিকটিমের কেউ নিয়োজিত করেননি। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল আইনজীবীর কোনো বক্তব্য আমলে না নিয়ে অজ্ঞাত কারণে তড়িঘড়ি করে চার্জ গঠন করে ঘন ঘন তারিখ রেখে বিচারকার্য সম্পন্ন করে সর্বোচ্চ সাজার ফরমাইশি রায় প্রদান করেন।

তিনি বিগত সরকারের নির্যাতনমূলক ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে’ প্রায় ৫ বৎসর সাজা খেটে আপিল করে জামিনে মুক্ত হয়েছেন। ফ্যাসিস্ট সরকার তার দলীয় লোক ব্যারিস্টার সুমনকে দিয়ে মিথ্যা মামলা এবং অনুগত পিবিআই কর্মকর্তা সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমারকে দিয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মিথ্যা রিপোর্ট তৈরি করে আদালতে দাখিল করিয়ে তাকে (ওসি) বলির পাঠা বানিয়ে জেলে পাঠায়। চাকরি হারিয়ে জেল খেটে বর্তমানে সন্তান ও পরিবারসহ মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে তাকে। সবকিছু বিবেচনা করে মামলাটি প্রত্যাহারের ব্যবস্থা ও চাকরিতে পুনর্বহালের সুযোগ সৃষ্টি করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের আর্জি জানান ওসি মোয়াজ্জেম।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, “বিগত স্বৈরাচার সরকারের সময়ে রাজনৈতিক কারণে যেসব নাশকতার মামলা বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হয়েছে, সেসব মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হচ্ছে। আর দুদকের শিডিউলভুক্ত অপরাধের যেসব মামলায় আবেদন করা হয়েছে, সেগুলোর ব্যাপারে আমরা মতামত দিইনি। কারণ, সেগুলো প্রত্যাহারের এখতিয়ার দুদকের। এর বাইরে যেসব মামলা প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করা হয়েছে, সেগুলো রাজনৈতিক কারণে কি না, মামলা প্রমাণের পর্যাপ্ত ডকুমেনটারি অ্যাভিডেন্স আছে কি না। তা দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: