
নিজস্ব প্রতিবেদক: ৪৩তম বিসিএসে রেলওয়ে ক্যাডারে সহকারী যন্ত্র প্রকৌশলী হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ জিহাদ হাসান সজল। পড়াশোনা শেষে তিনি সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সিদ্ধান্ত নেন এবং দ্বিতীয়বারের মতো বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সফল হন।
৪৩তম বিসিএসে রেলওয়ে ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে গেজেটভুক্ত হন। বর্তমানে তিনি জনতা ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন জনতা ব্যাংকের হেড অফিস মতিঝিল শাখায়।
সজলের গ্রামের বাড়ি বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলার বার্থী গ্রামে। তার বাবা পেশায় একজন ব্যবসায়ী, এবং মা একজন গৃহিণী। দুই ভাই-বোনের মধ্যে সজল বড়। শৈশবের বেশিরভাগ সময় কেটেছে নিজ গ্রামে, যেখানে তিনি সবসময় বিভিন্ন পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করতেন এবং ভালো রেজাল্টের জন্য পরিচিত ছিলেন। প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন আল হেলাল একাডেমি থেকে এবং মাধ্যমিক বার্থী তারা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। উচ্চমাধ্যমিক শেষ করেন বার্থী ডিগ্রী কলেজ থেকে।
মোঃ জিহাদ হাসান সজল বলেন, 'ছোটবেলা থেকেই আমি সব সময় ভালো ফলাফল করতাম, এবং আমার পরিবার সবসময় আমার শিক্ষার প্রতি খুব যত্নবান ছিল। বাবার ব্যবসা থাকলেও তিনি সবসময় আমার পড়াশোনায় গুরুত্ব দিয়েছেন, এবং মা সবসময় পাশে ছিলেন।'
সজল মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) থেকে। কুয়েট থেকে পড়াশোনা শেষে উচ্চশিক্ষার জন্য নর্থ আমেরিকার দেশে পাড়ি জমানোর ইচ্ছা থাকলেও তার মনের গভীরে দেশের মানুষের সেবা করার ইচ্ছা প্রবল ছিল। সেই চিন্তা থেকেই তিনি সরকারি চাকরিতে প্রবেশের জন্য বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন। প্রথমবারের পরীক্ষায় সফল না হলেও, তিনি হাল ছাড়েননি এবং দ্বিতীয়বারে সফল হন।
তিনি বলেন, "আমি সব সময় সরকারি কর্মকর্তাদের দেখে অনুপ্রাণিত হতাম। নিজের পঠিত জ্ঞান দিয়ে মানুষের সেবা করার ইচ্ছা থেকেই আমি বিসিএস পরীক্ষার জন্য কঠোর প্রস্তুতি শুরু করি। প্রথমবার ব্যর্থ হলেও, আমি নিজেকে নতুন উদ্যমে প্রস্তুত করি এবং দ্বিতীয়বার সফল হই।"
প্রিলিমিনারি ও রিটেন পরীক্ষার প্রস্তুতি সম্পর্কে তিনি বলেন, "বিসিএসের জন্য শুধুমাত্র পড়াশোনা করলেই হয় না, রিভিশন দেয়া এবং প্রশ্ন সলভ করাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমি প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় ধরে পড়তাম এবং প্রতিটি বিষয়ে গভীরভাবে অধ্যয়ন করতাম। প্রথমবারের ব্যর্থতা আমাকে আরও শক্তিশালী করেছে, কারণ দ্বিতীয়বারের প্রস্তুতিতে আমি আমার দুর্বলতাগুলো নিয়ে কাজ করেছি।"
রিটেন পরীক্ষার সময় তিনি আরও জোর দেন রিভিশন এবং প্রচুর প্রশ্ন সলভ করার উপর। তিনি বলেন, "প্রিলিমিনারির প্রস্তুতি অনেক ভালো হওয়ায় রিটেন পরীক্ষা নিয়ে তেমন একটা চিন্তা করতে হয়নি। আমি শুধু আমার দুর্বল বিষয়গুলোর উপর বেশি জোর দিয়েছি এবং রিভিশনের মাধ্যমে নিজেকে আরও প্রস্তুত করেছি।"
সজলের মতে, শৈশবের দিনগুলো তার জীবনের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তিনি বলেন, "প্রাথমিক শিক্ষার সময়টায় আমাদের এলাকায় শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি তেমন একটা গুরুত্ব ছিল না। আমরা অনেক সময় মাঠে খেলা করতাম, স্কুলের বাইরে সময় কাটাতাম। তবে আমার বাবা-মা সবসময় আমার শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন।"
সফলতার পেছনে পরিবারের ভূমিকা সম্পর্কে তিনি বলেন, "আমার সফলতার পেছনে আমার পরিবারের বিশাল অবদান রয়েছে। আমার বাবা-মা এবং শিক্ষকেরা সবসময় আমাকে সমর্থন দিয়েছেন এবং অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। তাদের সমর্থন ছাড়া আমি কখনও এখানে পৌঁছাতে পারতাম না।"
তিনি আরো বলেন, "প্রথমবারের ব্যর্থতা আমাকে শেখায়, পরিশ্রম এবং অধ্যবসায়ই সফলতার চাবিকাঠি। আমি কখনও হাল ছাড়িনি এবং প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে গেছি। দ্বিতীয়বারে সফলতা পাওয়াটা আমার জন্য একটি বড় প্রাপ্তি ছিল। আমি মনে করি, যারা অধ্যবসায়ী এবং সৎ প্রচেষ্টা চালায়, তাদের জন্য সফলতা অনিবার্য।
সজলের এই সফলতায় গ্রামবাসীও খুবই আনন্দিত। গ্রামের অনেকেই জানান , সজল গ্রামের সবার কাছেই খুবই নম্র , ভদ্র এবং অধ্যাবসায়ী ছেলে হিসেবে পরিচিত। সবাই সজলের উত্তরাউত্তোর সফলতা কামনা করেছেন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: