
রাবিপ্রবি থেকে : ছোট বড় পাহাড় ডিঙ্গিয়ে সাদা গাড়িগুলো একপাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে ছুটে চলে। মাঝে বেশকিছু ব্রিজ পার করে খুব দ্রুত এগিয়ে যায় লাল পাহাড়ের রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে। গত তিন- চার বছর আগেও এই রাস্তায় সময় করে নিয়ম মেনে এমন গাড়ি চলবে তা ছিলো কল্পনার বাহিরে। ভাবনার গভীরে মনে হতেই পারে সময়ের পরিবর্তনে এমন অনেক কিছুই চোখে পরে যা আগে কখনো কারো কল্পনাতেও ছিলো না।
চলছে আষাঢ় মাস। ঝুম বৃষ্টি আর সাদা মেঘের ছোটাছুটিতে পাহাড়গুলো এখন বেশ বৈচিত্রময়। টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে মৃতপ্রায় কাপ্তাইলেক প্রাণ ফিরে পেয়েছে। সাদা মেঘের ছুটো-ছুটি আর নানা রঙ্গের ফুলে রাবিপ্রবি অন্য রূপ ধারণ করেছে। হঠাৎ ঝুম বৃষ্টিতে পাহাড় থেকে নেমে আসা পানি আর মেঘের গর্জনে চারপাশ তাকিয়ে রাবিপ্রবিয়ানরা হারিয়ে যায় তাদের ছোট বেলার স্মৃতিতে।
বৃষ্টিতে ভিজে, ছাতা মাথায় করে ক্লাসরুম থেকে লাইব্রেরি কিংবা ক্লাস শেষ করে তারাতারি করে বাসায় ফেরার যে দৈনন্দিন অভ্যাস তা হয়তো বৃষ্টির কারণে কিছুটা ভাটা পরে। তবে বৃষ্টিতে ভিজে বৃষ্টিবিলাস আর সময় পেলে টঙ্গের দোকান থেকে চা পান করতে ভুল করেননা তারা।
এই শহরে বৃষ্টি নামলে ঝড় ওঠে বুকের ভিতরে। বুক মানেই তো ছয় তারের গিটার। বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটার টুংটাং শব্দ হৃদয়কে নাড়া দেয়। বাদলা দিনে কবিগুরুর সে ‘আষাঢ়’ কবিতা মনে পড়লে হয়তো মনে হতেই পারে ইট পাথরের এই শহুরে জীবনে বাহিরে না গিয়ে উপায় আছে কি? তাইতো বৃষ্টিময় ক্যাম্পাসে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত নিয়মিত ক্লাসের ফাঁকে হঠাৎ আড্ডা জমে তেঁতুল তলায়। আড্ডা জমে ওঠে ক্লাস রুমের কোনায়। বৃষ্টিবিলাসে মাতে জানালা থেকে বের হওয়া লাল- নীল কাচেঁর চুড়ির হাত।
বৃষ্টি বিলাসী শহুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে আলাদা রাবিপ্রবি। শহরের আশেপাশে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃষ্টি হলে কাঁদা, যানজট, আর রিক্সার সংকট শুরু হলেও রিক্সাবিহীন এই শহরে গাড়ির অপেক্ষায় প্রহর গোনার সময়গুলো তাই বৃষ্টিবিলাসেই পার করে রাবিপ্রবিয়ানরা। আষাঢ়ের এই বৃষ্টির র্স্পশে রাবিপ্রবিয়ানরা খুঁজে পায় পরম আনন্দ। রাবিপ্রবির ক্যাম্পাস যেন হঠাৎ ছুঁয়ে দেওয়া মেঘ-রোদ্দুরের সাদা-কালো রঙ্গের উপাখ্যান। যেখানে হাজারো স্বপ্ন হঠাৎ বৃষ্টিতে ভিজে অতীতের ছবি আঁকে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: