
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ আর্থিক টানাপোড়েনের এই সময়েও ভর্তুকি আর প্রণোদনার চাপে অন্তর্বর্তী সরকার। অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে বরাদ্দের ৪০ ভাগ খরচ হয়েছে। টাকার অংকে যা প্রায় ৫৯ হাজার কোটি। এর বেশিরভাগই ব্যয় হয়েছে বিদ্যুৎ ও কৃষিতে। অবাক করা বিষয় হলো, বেসরকারিখাতের বেক্সিমকো আর অনিয়ম দুর্নীতিতে বিপর্যস্ত বিমান ও চিনি করপোরেশনসহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠানও পেয়েছে সরকারি অর্থ।
গেলো দেড় দশকে বিদ্যুৎখাতকে সাফল্যের বড় উদাহরণ হিসেবে দেখানো হলেও তার আড়ালে ছিল আর্থিক অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম আর লুটপাটের মহোৎসব। পিডিবির হিসাবে, সবশেষ অর্থবছরে প্রতি ইউনিটের উৎপাদন ব্যয় ছিল প্রায় সাড়ে ১১ টাকা। অথচ গ্রাহকের কাছে কম দামে বিক্রি করায় ইউনিটপ্রতি ভর্তুকি দিতে হয়েছে ৪ টাকার মতো। ফলে সরকারকে কেবল এই খাতে ওই সময়ে ব্যয় করতে হয় ৩৩ হাজার কোটি টাকা।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরেও উৎপাদন ব্যয় ও অদক্ষতার খেসারত আরও বেশি গুণতে হচ্ছে। যেজন্য ভর্তুকি বাড়িয়ে করা হয় ৪০ হাজার কোটি। আর্থিক টানাপোড়েনের এই সময়ে গেলো ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সেই ভর্তুকির সাড়ে ২৩ হাজার কোটির ওপরে ছাড়ও করেছে অর্থমন্ত্রণালয়। যা মোট বরাদ্দের ৫৯ শতাংশ। শুধু বিদ্যুৎ নয়, সুনির্দিষ্টভাবে বরাদ্দ না থাকলেও এই সময়ে এলএনজি আমদানির জন্য ভর্তুকি বাবদ খরচ করা হয়েছে আরও সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা।
সিপিডি’র সম্মাননীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সুনির্দিষ্ট করে দেখতে হবে কোনটা যৌক্তিক বা কোনটা যৌক্তিক নয়। এগুলোর ফলে এটাকে যদি ভালোভাবে ব্যবস্থাপনা না করা হয়, তাহলে জনগণের করের টাকা উন্নয়নমূলক কাজে ব্যয় করা যাবে না।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জন্য মোট ভর্তুকি রাখা হয়েছে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা। যার বিপরীতে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছাড় হয়েছে প্রায় ৫৯ হাজার কোটি। আগের অর্থবছরের চেয়ে কৃষি ভর্তুকি বেশ খানিকটা কমিয়ে ১৭ হাজার কোটি ধরা হলেও প্রায় ১৫ হাজার কোটি ছাড় হয়েছে ৮ মাসে। ফলে বছর শেষে তা বাড়তে পারে আরও খানিকটা। অন্যদিকে আর্থিক সংকটের মধ্যেও ১৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয় রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের প্রণোদনার জন্য। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বর্তমান বাস্তবতায় কিছু কিছু খাতে এটি দরকার হলেও সতর্ক থাকতে হবে ব্যয়ের ক্ষেত্রে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, পরিচালন ঋণ বাবদ বরাদ্দ ১২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রায় দেড় হাজার কোটি ব্যয় করা হয়েছে বেক্সিমকো, বিমান বাংলাদেশ ও চিনি করপোরেশনসহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের ঋণ পরিশোধে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: