ঢাকা | বৃহঃস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২ [email protected] +৮৮ ০১৬৮২ ৫৬ ১০ ২৮, +৮৮ ০১৬১১ ০২ ৯৯ ৩৩

লালমনিরহটে তিস্তার পানি কমলেও বেড়েছে দুর্ভোগ, দেখা দিয়েছে ভাঙন

মো: মনিরুল ইসলাম | প্রকাশিত: ৩ আগস্ট ২০২২ ২২:৪২

মো: মনিরুল ইসলাম
প্রকাশিত: ৩ আগস্ট ২০২২ ২২:৪২

ছবি : সংগৃহীত

লালমনিরহাট থেকে : উজানের ঢলে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে লালমনিরহাটের ৫ উপজেলায় প্রায় ১৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। তিস্তার পানি কমলেও বেড়েছে দুর্ভোগ। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। সৃষ্ট বন্যার কারণে গত দুই দিন থেকে লালমনিরহাট জেলার ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ রয়েছে।

বুধবার (৩ আগস্ট) সকাল ৯টায় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানীতে অবস্থিত তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি ৫২.৪৭ সেন্টিমিটারে প্রবাহিত হচ্ছে (স্বাভাবিক ৫২.৬০) যা বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধা ৬টায় তিস্তার পানি বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।

বুধবার সকাল ৯টায় ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদদৌলা বলেন, ভোর থেকে তিস্তার পানি কমতে শুরু করেছে। তিস্তার পানি বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার গোলাম নবী জানান, বন্যায় জেলার তিস্তা নদী তীরবর্তী এলাকার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে জেলার ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার থেকে ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। পানি কমলে প্রাথমিক বিদ্যালয় যথারীতি নিয়মে চলবে।

জানা গেছে, তিস্তার পানি বৃদ্ধিতে লালমনিরহাট জেলায় আবারও বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন তিস্তার চরাঞ্চলের ১৫ হাজার পরিবার। হঠাৎ করে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে নদী পাড়ের লোকজনের মাঝে। এছাড়াও গত দুইদিন ধরে তিস্তার পাড়ে ভাঙনে দেখা দিয়েছে।

এদিকে, কয়েকদিনের ভারি বৃষ্টিপাত ও ভারতের গজলডোবা ব্যারাজে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তা নদীতে পানি বেড়েছে। তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নদীর তীরবর্তী এলাকায় ও নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। এতে জেলা সদর, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও পাটগ্রাম উপজেলায় নদীর তীরবর্তী ১৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এদিকে জেলার চারটি উপজেলার বন্যায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ক্লাসরুমে পানি চলে আসায় ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল বলেন, গড্ডিমারী ইউনিয়নের ৪ ওয়ার্ডে প্রায় ২,০০০ পরিবার গত দুইদিন ধরে পানিবন্দি হয়ে আছেন। পরিবার গুলোর তালিকা করা হয়েছে কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা হয়নি।

এদিকে, আদিতমারী উপজেলার সলেডি স্পার-২ এলাকায় তিস্তা নদীর পানি হু হু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তিস্তা পাড়ের লোকজন অনেকেই বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। আবার অনেকেই তাদের গবাদিপশু নিয়ে উঁচু স্থানে গাদাগাদি করে অবস্থান করেছেন। উপজেলার কালমাটি এলাকার গত দুই দিনে প্রায় ৩০টি পরিবারের ঘরবাড়ি নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছেন।

পরিবারগুলো ঘরবাড়ি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সেই সাথে বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রটি যাওয়ার রাস্তায়ও হাটু পরিমাণ পানি উঠায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে বানভাসি মানুষদের।

খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের ইউপি সদস্য লাল মিয়া বলেন, হঠাৎ করে রাতেই তিস্তায় পানিবৃদ্ধি পাওয়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন এখানকার বাসিন্দারা। পানি বৃদ্ধির পাশাপাশি দেখা দিয়েছে ভয়াবহ ভাঙন।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর বলেন, বন্যাকবলিত পরিবারগুলোর সার্বক্ষণিক খোঁজ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে। পানিবন্দি পরিবারগুলোর মাঝে ৩,০০০ প্যাকেট বরাদ্দ করা হয়েছে তা দ্রুত বিতরণ করা হবে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: