04/21/2025 প্রসব বেদনা নিয়ে উটের পিঠে নারীর ৭ ঘণ্টা
মো: মনিরুল ইসলাম
২৪ মে ২০২৩ ১৯:৫৬
ভোরের ডাক ডেস্ক : মোনার যখন প্রসবের যন্ত্রণা শুরু হয়, তখন একটি উট তার জীবন বাঁচানোর একমাত্র উপায় হয়ে ওঠে। ১৯ বছর বয়সী মোনা উত্তর-পশ্চিম ইয়েমেনের একটি পাহাড়ী এলাকায় বসবাস করে। সেখান থেকে নিকটতম হাসপাতালটি ৪০ কিলোমিটার দূরে। কিন্তু রাস্তা নেই। ফলে গর্ভবতী মোনা ভেবেছিলেন হাসপাতালে পৌঁছতে চার ঘণ্টা লাগবে। কিন্তু প্রসব বেদনা এবং পথে খারাপ আবহাওয়ার কারণে যাত্রা শেষ করতে তার সময় লেগেছে প্রায় সাত ঘণ্টা।
মোনা বলেন, ‘উটের পিঠে বসে প্রতিটি কদম এগানোর সময় আমি যন্ত্রণায় ভেঙে পড়ছিলাম।’ উটটি যখন আর চলতে পারছিল না, তখন পিঠ থেকে নেমে হাঁটতে শুরু করেন তিনি ও তার স্বামী।
উত্তর-পশ্চিম ইয়েমেনের মাহুইত প্রদেশে বানি সাদ হাসপাতালটিই সেখানকার হাজার হাজার নারীর জন্য একমাত্র স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান। মোনা যে গ্রামে থাকেন, সেই আল-মাকারা থেকে এই হাসপাতালে পৌঁছানোর একমাত্র উপায় উটের পিঠে দুর্গম পাহাড়ি পথ পাড়ি দেওয়া অথবা পায়ে হেঁটে যাওয়া।
মোনা যখন উটের পিঠে চড়ে যাচ্ছিলেন, তখন নিজের এবং গর্ভের সন্তানের কথা ভেবে বারবার তার মনে নানা আশঙ্কা উঁকি দিচ্ছিল। তিনি বলেন, পথটা ছিল পাথুরে। এমন পথে যাওয়ার সময় শরীর আর মনের ওপর সাংঘাতিক ধকল যাচ্ছিল। সময় সময় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছিলাম, যেন তিনি আমাকে নিয়ে যান, যাতে এই যন্ত্রণা থেকে আমি রক্ষা পাই। তবে আমার সন্তানকে যেন তিনি রক্ষা করেন।
শেষ পর্যন্ত কখন হাসপাতালে পৌঁছালেন তা আর মোনার মনে নেই। তবে তিনি মনে করতে পারেন, ডাক্তার আর ধাত্রীদের হাতে যখন তার ভূমিষ্ঠ শিশু কেঁদে উঠলো, তখন মনে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছিল। মোনা ও তার স্বামী শিশুটির নাম রেখেছেন জারাহ, যে চিকিৎসকের হাতে তার জন্ম হয়েছে, সেই চিকিৎসকের নামে।
ইয়েমেনে গত আট বছর ধরে গৃহযুদ্ধ চলছে। এর ফলে কিছু কিছু রাস্তা একদম ভেঙেচুরে গেছে। কোথাও কোথাও পথ অবরুদ্ধ। এই যুদ্ধের এক পক্ষে রয়েছে সৌদি জোটের সমর্থনপুষ্ট সরকারপন্থি বাহিনী, অন্যপক্ষে ইরানের মদতপুষ্ট হুথি বিদ্রোহী গোষ্ঠী।
পাহাড়ি পথ বেয়ে গর্ভবতী নারীদের হাসপাতালে নিতে সময় লাগে অনেক। ঘণ্টার পর ঘণ্টা এই পথ পাড়ি দেওয়ার সময় তাদের সঙ্গে থাকেন স্বামী বা পরিবারের সদস্যরা।
এক গর্ভবতী নারীকে হাসপাতালে নেওয়ার সময় সঙ্গে ছিলেন সালমা আবদু (৩৩)। তিনি জানান, পথে আরেক গর্ভবতী নারীকে মারা যেতে দেখেছেন।
সালমা আরও বলেন, আমাদের রাস্তা দরকার, হাসপাতাল দরকার, ওষুধ দরকার। আমরা এই উপত্যকার মধ্যে আটকা পড়েছি। যারা সৌভাগ্যবান, তারা নিরাপদে সন্তান জন্ম দিতে পারছে। কিন্তু অন্যরা মারা যাচ্ছে। তাদের এই পথের যন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছে। সূত্র: বিবিসি বাংলা।