এই সময়ে বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনার প্রধান উপাদান ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমন। এরই মধ্যে পক্ষে-বিপক্ষে বিভিন্ন গ্রুপ দাঁড়িয়ে গেছে। আমাদের দেশের কিছু বাম ধারার শিক্ষার্থী সাবেক সোভিয়েত আমলে সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং তার প্রভাব বলয়ের দেশগুলোতে পড়াশোনার জন্য গেছেন। অনেকে আবার দেশে ফিরে এসেছেন। তবে এদের মধ্যে খুব কমই আছেন যে, ইউক্রেনে গেছেন বা পড়েছেন।

২০০৯-১০ এ চেক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী প্রাগে ছিলাম। সেখানে বেশকিছু ইউক্রেনের লোকের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। তাদের সূত্রে এবং প্রাগ থেকে প্রকাশিত ‘’The Prague Post” নামক পত্রিকার মাধ্যমে দেশটি সম্পর্কে সামান্য কিছু জানার সুযোগ হয়েছে।

উল্লেখ্য যে, পত্রিকাটি আমেরিকার পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত হতো এবং এর সম্পাদক ও একজন আমেরিকান। পত্রিকাটি ট্যুরিস্ট ও দেশটিতে অবস্থান করা বিদেশী শিক্ষার্থীদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। এই পত্রিকাটিতে বিশেষ গুরুত্ব পেতো ইউক্রেনের সংবাদ। কোন না কোন নিউজ/ পর্যালোচনা নিয়মিত থাকতো ইউক্রেনের ঘটনা প্রবাহ নিয়ে। তখন আমার মনে হতো রাশিয়ান বলয় থেকে আমেরিকার বলয়ে প্রবেশ করা দেশটির প্রতি বিশেষ নজর আছে বলেই পত্রিকাটিতে ইউক্রেনের এতো প্রাধান্য।

প্রাগ পোস্ট একবার লিখেছিলো যে, ইউক্রেনের স্কুলগুলোতে যৌন শিক্ষার জন্য কোর্স বন্ধ করে দিয়েছে। এর পর্যালোচনায় পত্রিকাটি লিখেছিল, ক্লাসে যখন শিক্ষকরা কোর্সটি পড়াতেন তখন শিক্ষার্থীরা মনোযোগ দিতো না। একে অপরকে টিপ্পনী কাটতো। পরে কর্তৃপক্ষ জানতে পারেন পাঠ্যক্রমের সিলেবাসের চেয়ে শিক্ষার্থীরা বেশি জানে আর এ কারণেই ক্লাসে তাদের মনোযোগ থাকে না। সুতরাং এই কোর্সের প্রয়োজনীয়তা না থাকায় স্কুল পর্যায়ে কোর্সটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এক ইউক্রেনী তরুনী কাজ করতো আমাদের প্রতিষ্ঠানে। সে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তো এবং মরক্কোর এক মুসলিম ছেলের সঙ্গে লিভ-টুগেদার করতো। এর বিনিময়ে থাকা ও খাওয়ার খরচ লাগতো না। এছাড়া তার বয়ফ্রেন্ড মাঝেমধ্যে কিছু হাত খরচ ও দিতো। তরুনীটির একটি কন্যা ছিল এবং সে প্রাগেই তার নানীর সঙ্গে থাকতো। একবার সে নিজ দেশে যাবে বলে চাকুরী থেকে এক মাসের ছুটি নিলো। ফিরে আসার পর দেখলাম একটি দামী ল্যাপটপ ব্যবহার করছে।

নিজেই জানালো, ইউক্রেনের তার সাবেক বয়ফ্রেন্ড দিয়েছে। দেশে যাওয়ার পর ওরা বেশ কিছু দিন একসঙ্গে ছিল। আসার সময় সাবেক বয়ফ্রেন্ড খুশি হয়ে উপহার হিসেবে ল্যাপটপ টি দেয়। বললাম তোমার বর্তমান বয়ফ্রেন্ড জানে? সে বলল ওকে বলার দরকার কি?

কোন একদিন সে তার মা, বাবা, কন্যা ও মরক্কোর বয়ফ্রেন্ড কে আমার ও আমার স্ত্রীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। সঙ্গে এটা ও জানায় যে, তার বর্তমান বাবা আসল বাবা নয়, সে ছিল তার মায়ের তৃতীয় স্বামী। তার প্রকৃত বাবা ইউক্রেনেই থাকে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ইসরাইলের সমর্থক। ইসরাইল যখন নিরীহ ফিলিস্তিনীদের অন্যায়ভাবে হত্যা করছিলো, তখন ইসরাইলকে সমর্থন করেছিলেন তিনি। এ নিয়ে তার একটি টুইট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাসছে।

বাংলাদেশ যখন রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে হাবুডুবু খাচ্ছিলো তখন জাতিসংঘ অধিবেশনে বাংলাদেশের বিপক্ষে ভোট দিয়েছিলো এই দেশটি।ইউক্রেন আমেরিকা ও ন্যাটোর সমর্থনে আফগানিস্তানে সৈন্য পাঠিয়েছিল দেশটি। দীর্ঘ ১৪ বছর সেখানে ইউক্রেনীয় সৈন্যরা অবস্থা করেছিলো।

ইরাকে আমেরিকার আগ্রাসনের সময়ও দেশটিতে আমেরিকার সমর্থনে সৈন্য পাঠিয়েছিল ইউক্রেন। সে সময় তৃতীয় বৃহত্তর সৈন্য প্রদানকারী দেশ ছিল ইউক্রেনের।

একসময়ের নিপীড়কদের সহায়তাকারী ইউক্রেন এখন নিজেই মজলুম। তারা নিশ্চয়ই এখন টের পাচ্ছেন কত ধানে কত চাল। এক মাঘে যে শীত যায় না এটা সবারই বুঝা উচিত।

বিপদ যে কোন সময়, যে কারো হতে পারে। তাই অন্যায়ের পক্ষ কোনভাবেই কারো নেয়া উচিত না। আমি যে কোন যুদ্ধের বিপক্ষে। যুদ্ধের পরিণতি সব সময়ই নির্মম। এতে শুধু মুষ্ঠিমেয় লোকের লাভ হয়। যুদ্ধ মানেই মানবতার বিপর্যয়, নিরীহ মানুষের প্রাণহাণি। এটা কখনোই কারো কাম্য হতে পারে না। সাদা-কালো যাই হোক, দিন শেষে মরছে মানুষ, যারা মরছে সবার রক্তই লাল, তা ফিলিস্তিনি, ইরাকি, রোহিঙ্গা বা ইউক্রেনীয়ই হোকনা কেন। তাই আমাদের সব সময় কামনা হওয়া উচিত যুদ্ধ মুক্ত, শান্তিময় বিশ্ব।

মুহাম্মদ নূরে আলম

সাংবাদিক, কলামিষ্ট,
ঢাকা।

বিদেশ বার্তা/ এএএ