04/20/2025 চার কারণে অনিশ্চিত যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি
মো: মনিরুল ইসলাম
১৮ মে ২০২২ ০১:১৪
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : করোনাভাইরাসের প্রকোপ সামলে উঠে দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই এবার মূল্যস্ফীতির মুখে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বাড়ছে জিনিসপত্রের দাম। যার কারণে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ।
এক পরিসংখ্যান বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৮০ সালের পর কখনই পণ্যের দাম এতটা বাড়েনি। দেশটির হাউজিং মার্কেটে দেখা দিয়েছে মারাত্মক অস্থিরতা। ২০০৭ সালের মতো মূল্যস্ফীতি থেকে অর্থনৈতিক মন্দার দিকে ধাবিত হতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। এমন মারাত্মক মূল্যস্ফীতির কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে চারটি মূল অসঙ্গতি সামনে উঠে এসেছে।
১. ফেডারেল রিজার্ভের অদূরদর্শিতা
মূল্যস্ফীতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এমন অবস্থায় ফেডারেল রিজার্ভের একমাত্র অস্ত্র সুদের হার বাড়ানো। এতে করে খরচ কমার চেয়ে বাড়ছে এবং অর্থনীতির গতি আরো ধীর হয়ে যাচ্ছে। মূল্য সমস্যা হচ্ছে, ২০২১ সাল জুড়ে যখন মূল্যস্ফীতি অস্বাভাবিক হারে বাড়ছিল, তখন প্রতিষ্ঠানটি এক রকমের হাত গুটিয়ে বসে ছিল। হঠাৎ করে চলতি বছরের মার্চ মাসে সুদের হার বাড়িয়ে দেয় ফেডারেল রিজার্ভ। এতে করে অর্থনীতিতে দেখা দেয় অস্থিরতা।
বর্তমানে ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার ছড়িয়ে গেছে বিগত ২২ বছরের রেকর্ড। এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান জেরম পাওয়েল বলেছেন, মূল্যস্ফীতি না কমা পর্যন্ত সুদের হার বাড়তে থাকবে।
ফেডারেল রিজার্ভের এমন সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে ওয়াল স্ট্রিটের ব্যাংকগুলো জানিয়েছে, এভাবে সুদের হার বাড়াতে থাকলে খুব দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র মূল্যস্ফীতি থেকে অর্থনৈতিক মন্দার দিকে ধাবিত হবে।
২. শেয়ারবাজারে চলমান অস্থিরতা
যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারগুলোতে চলছে ভয়াবহ অস্থিরতা। শেয়ার কেনার থেকে বিক্রির দিকেই ঝোঁক বেশি বিনিয়োগকারীদের। চলতি বছরের জানুয়ারিতে দেশটির শেয়ারবাজার হারিয়েছে অর্ধেক মূলধন।
যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় স্টক এক্সচেঞ্জ নাসডাক চলতি বছরে ৭ ট্রিলিয়ন ডলার পুঁজি হারিয়েছে। মূলত উচ্চ সুদহারের কারণে কোম্পানিগুলোকে লোকসান গুনতে হচ্ছে। এতে করে বিনিয়োগকারীরা অর্থলগ্নি করতে আগ্রহ পাচ্ছেন না।
শেয়ারবাজারের পতনে সব থেকে বেশি সমস্যার মুখে পড়েছে অবসরপ্রাপ্তরা। তারা মূলত তাদের পেনশনের টাকা শেয়ারবাজারে লগ্নি করে থাকে। এছাড়াও যাদের আয় শেয়ারবাজারকেন্দ্রিক তারা হতাশ হয়ে পড়েছে।
সম্প্রতি মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা যায়, শেয়ারবাজারে রেকর্ড হারে কমে গেছে 'কনজুমার সেন্টিমেন্ট'। এপ্রিল-মে মাসে ভোক্তাদের এই আগ্রহ ৯ দশমিক ৪ শতাংশ কমে গেছে, যা বিগত ১১ বছরের রেকর্ড।
৩. বন্ডের বাজারে মন্দা
শেয়ারবাজারে সুবিধা করতে না পারলে বন্ড মার্কেটে অর্থলগ্নি করে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা। তবে এবার পাল্টে গেছে চিত্র।
একদিকে সেইফ ট্রেজারি বন্ড বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার। অন্যদিকে উৎপাদনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে না বন্ডের দাম। উৎপাদন বাড়লে বন্ডের দাম উল্টা কমে যাচ্ছে। এতে করে বন্ড ক্রয়ে আগ্রহ হারাচ্ছে সাধারণ ভোক্তারা।
এদিকে ট্রেজারি বন্ড বিক্রি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীরা আগাম মন্দা নিয়ে ভয় পাচ্ছেন। এতে করে বন্ড মার্কেট উল্লেখযোগ্য হারে ভোক্তা হারাচ্ছে। স্থবির হয়ে পড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি।
৪. বৈশ্বিক অস্থিরতা
করোনা সামলে দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই শুরু হয়ে গেছে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত। অনেকটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো শাঁখের করাতে পড়েছে সুপার পাওয়ার যুক্তরাষ্ট্র।
একদিকে সংঘাতকালীন সংকটে বেড়ে গেছে তেল ও গ্যাসের দাম, অন্যদিকে চীনের দেওয়া নতুন লকডাউনে দেখা দিয়েছে সরবরাহ সংকট।
এতে করে দিনকে দিন মন্দার দিকে আগাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি। নিজের অবস্থান ধরে রাখতে বহির্বিশ্বে অর্থ ঢালতে হচ্ছে দেশটিকে। অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ সংকট মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার। সূত্র: সিএনএন।