04/21/2025 শিশুদের লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধূলার প্রতিও মনোযোগী হবেন: প্রধানমন্ত্রী
আল আমিন
১২ মে ২০২২ ০৩:১৪
নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিভাবকদের তাদের শিশুদের বাইরে খেলাধুলা করতে উৎসাহিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি সকল অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি, আপনারা আপনাদের শিশুদের লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধূলার প্রতিও মনোযোগী হবেন। তাহলে শিশুরা আর ভূল পথে যাবে না। খেলাধূলা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বিকাশে সহায়ক হবে। কারণ, জাতি গঠনে এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
শেখ হাসিনা আজ সকালে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে গৌরবোজ্জল অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ৮৫ ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব ও সংগঠককে ‘জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার’ ‘২০১৩-২০২১’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি’র ভাষণে এ সব কথা বলেন।
তিনি তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের বেশিরভাগ শিশু প্রায় সময় ফ্ল্যাটে মোবাইল, ল্যাপটপ এবং আইপ্যাড নিয়ে সময় কাটাচ্ছে। যা তাদের শারিরীক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই অমঙ্গলজনক।’
শেখ হাসিনা বলেন, খেলাধূলা শরীরচর্চা এবং সাংস্কৃতিকচর্চা একটি জাতির জন্য অপরিহার্য। এ কথা সবাইকে মনে রাখতে হবে আমাদের একেবারে ছোট শিশু থেকে সকলকে উৎসাহিত করতে হবে এবং সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে। তাহলেই আমাদের ছেলে-মেয়েরা মানুষের মত মানুষ হতে পারবে।
তাদের মনটাও ভালো থাকবে, তারা ভালভাবে লেখাপড়া শিখবে এবং বিপথে যাবেনা- এটাই আমার বিশ্বাস।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খেলাধুলা এক ধরনের শরীর চর্চা। এতে আমাদের ছেলে-মেয়েরা শারীরিক এবং মানসিকভাবেও যথেষ্ট উপকৃত হয়। সেই সাথে আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলে অনেক ধরনের খেলাধুলা ছিল, সেগুলো আবার সচল করতে হবে। এ জন্য আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতা, আন্তঃকলেজ প্রতিযোগিতা এবং আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতাগুলো যেন ব্যাপকভাবে চলে সে ব্যবস্থা নিতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল, সাঁতার, হকিসহ বিভিন্ন খেলার সাথে সাথে দেশিয় খেলাগুলো যেমন: ডাংগুলি, সাত চারা গোল্লাছুট থেকে শুরু করে হাডুডুসহ যে সব খেলাগুলো প্রচলিত ছিল, সেগুলো আবার চালু করতে হবে। আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে হবে। যেটা আমরা ফুটবলের ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায় থেকেই আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতা শুরু করেছি। ফলে আমাদের অনেক নতুন নতুন খেলোয়াড় সৃষ্টি হচ্ছে এবং তারা জাতীয় পর্যায়েও বিশেষ অবদান রাখছে। কাজেই এদিকে সকলে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেবেন।
এ ব্যাপারে যে ধরনের সহযোগিতা দরকার তার সরকার তা করে যাচ্ছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, আমরা চাই এ খেলাধূলার বিষয়ে আমাদের আরো উদ্যোগী হতে হবে।
রাজধানী ঢাকায় খেলাধুলার জায়গা কম উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা কিছুটা উদ্যোগ নিয়েছি প্রত্যেক এলাকাতেই যেন খেলার মাঠ থাকে। যেখানে খালি জায়গা পাচ্ছি খেলার মাঠ করে দিচ্ছি। কারণ, প্রত্যেকটা এলাকাতেই খেলার মাঠ থাকা একান্তভাবে প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে সংসদ ভবনের পাশে বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের খেলাধূলার জন্য একটা একাডেমিও নির্মাণ করে দেয়া হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল পুরস্কার প্রাপ্তদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন এবং অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
এর আগে, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ২০১৩ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত দেশের ক্রীড়াঙ্গনে তাদের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ৮৫ জন ক্রীড়া ব্যক্তি ও সংগঠককে এই মর্যাদাপূর্ণ জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারের জন্য মনোনীত করে।
পুরস্কার হিসেবে প্রত্যেকে পাবেন একটি আঠারো ক্যারেট মানের ২৫ গ্রাম ওজনের স্বর্ণ পদক, এক লাখ টাকার চেক এবং একটি সনদপত্র।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দ্বিতীয় পুত্র শহীদ লে. শেখ জামালকে ২০২০ সালের খেলোয়াড় ও সংগঠক হিসেবে (মরণোত্তর) পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। তাঁর পক্ষে পরিবারের সদস্য এবং খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল পুরস্কার গ্রহণ করেন।
ক্রিকেট ফুটবলসহ সব ক্রীড়াক্ষেত্রেই আমাদের নারীদের সাফল্য উল্লেখ করে তিনি নারীদের জন্য আরো সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীকে নির্দেশ দেন।
খেলাধূলার মানোন্নয়নে তার সরকার প্রত্যেক উপজেলা পর্যায়ে যে মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ করে দিচ্ছে সে কাজ আরো দ্রুত সম্পন্ন করার জন্যও প্রধানমন্ত্রী এ সময় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে তাগিদ দেন।
তিনি বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে খেলাধুলার সুবিধাদির উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রথম পর্যায়ে দেশের ১২৫টি উপজেলায় শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও ১৮৬টি উপজেলায় শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে। তৃতীয় পর্যায়ে দেশের অবশিষ্ট ১৭১টি উপজেলায় শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের লক্ষে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ চলমান রয়েছে। তবে আমি মনে করি এ ব্যাপারে যাতে আর সময় না নেয়া হয় সেটা দেখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার পর্যটন জেলা কক্সবাজারের দৃষ্টি নন্দন আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম ও ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণ করে দিচ্ছে উল্লেখ করে, সিলেটেও আন্তর্জাতিক মানের ষ্টেডিয়াম নির্মাণ করা হচ্ছে এবং দু’টি জায়গাতেই পাহাড়ের নৈসর্গিক দৃশ্য এবং সমুদ্রের পাশটি উন্মুক্ত রেখেই তা করা হচ্ছে।
পাশাপাশি তার সরকার প্রতি জেলায় জেলায় যে স্টেডিয়াম করে দিচ্ছে তা যেন সারাবছর ব্যবহার হয়, সকল খেলার জন্য তা উন্মুক্ত করে দেয়ারও প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেন। সে সব জায়গায় যদি ক্রিকেট পিচ থাকে তাহলে সেগুলো যাতে সংরক্ষণ করা হয় সেদিকেও তিনি দৃষ্টি দেয়ার আহ্বান জানান।
বিদেশ বার্তা/ এএএ